English French German Italian Portuguese Russian Spanish

Related Articles

Search

Mountain and Stone

পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস : বারবার ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা

Print

 

 

23rd March, 2013

 

 

 

 

মিরসরাই উপজেলা সংবাদদাতা : পাহাড় ও সমুদ্র বেষ্টিক ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ মিরসরাই উপজেলারবিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলের পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালুতে দিন দিন মানুষের বসবাসবিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বর্ষায়ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতেমৃত্যুবরণ করে ১০ জন। এছাড়া গত অর্ধযুগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালুতেবসবাসকারী অন্তত অর্ধশত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বারবার এসব দুর্ঘটনার পরও প্রশাসননিচ্ছে না কোন কঠোর পদক্ষেপ। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কোন উদ্যোগ না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণবসবাস অনেকটা উৎসাহিতই হচ্ছে। সরেজমিন জানা গেছে উপজেলার ১নং করেরহাট, ২নংহিঙ্গুলী, ৯নং মিরসরাই, ১২নং খৈয়াছরা, ১৫নং ওয়াহেদপুর এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে অন্ততঅর্ধলক্ষ মানুষ পাহাড়েরঝুঁকিপূর্ণ ঢালুতে বিপজ্জনকভাবে বসবাস করছে। এমনিতেইচট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসের কারণে বারবার মর্মান্তিকমৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে যা সকলের জন্য বেদনাদায়ক। আবার গত কয়েক বছরে মিরসরাইউপজেলার করেরহাট এলাকায় রামগড় সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসেকয়েকজনের মৃত্যু হয়, আহতহয়েছে অনেকে। বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়েরঢালুতে বসবাস করতে দেখা যায় মিরসরাই ও খৈয়াছরা বন বিট এলাকার বিভিন্ন পাহাড়িএলাকায়। খৈয়াছরা ও মিরসরাই অংশেকিছুউপজাতিরা বিভিন্ন উঁচু ও ঢালু অংশে পাহাড়কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া অনেকে পুরাতন বিভিন্নগাছপালা কেটে ফেলায় আরো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে করেরহাট রেঞ্জেরসহকারী বন সংরক্ষক (চট্টগ্রাম উত্তর) বেলায়েত হোসেনের কাছে এই ঝুঁকিপূর্ণ জানতেচাইলে তিনি বলেন, আমরাও বিভিন্নস্থানের ঝুঁকিপূর্ণতার অভিযোগ পেয়েছি এতোকাল তোদুর্ঘটনা হয়নি তবে যেহেতু অভিযোগ আসছে আমরা ব্যবস্থা নেব। উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এইবিষয়ে উদ্যোগ না নিলে যে কোন সময় মিরসরাই উপজেলায় ও ঘটে যাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনারবিশাল ট্র্যাজেডি।

 


 

 

Source: dailyinqilab

 


 

 

 

{jcomments on}

 

পাথর উত্তোলনে পরিবেশ বিপর্যয়

Print

 

লেখক: মোস্তাক আহমেদ ইমন | বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, ৫ আশ্বিন ১৪১৯

 

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার জন্য অধাতব খনিজ (Mon-metallic Minerals)-এর গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলো প্রকৃতির সৃষ্টি, প্রকৃতির দান। সাধারণত বিভিন্ন শিলা উপাদানগুলো ধীরে ধীরে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন অধাতব খনিজে পরিণত হয়। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন অধাতব খনিজগুলো হলো চুনাপাথর, চিনামাটি সিলিকা বালি, পাথর বা কঠিন শিলা, খনিজ বালি নুড়ি পাথর অন্যতম। পরিমাণ বা আকারে কিংবা উত্পাদনে বা মানে কম বেশি থাকলেও এই ছোট্ট দেশে এসব খনিজের মূল্য অতিমূল্যবান, যেটুকু আছে প্রয়োজন তার সঠিকভাবে উত্তোলন ও ব্যবহারকরণ।

বিভিন্ন সূত্র মতে পাটগ্রামে অন্তত ৬০০ মেশিনে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সব মেশিনে প্রতিদিন ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করা হয়। দিনে দিনে এভাবে পাথর উত্তোলন করায় আবাদী জমির পরিমাণ কমছে ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভূমির স্বাভাবিক উর্বরতা। এমনিতে পঞ্চগড়ের অনেক জমি অনাবাদী হিসাবে পড়ে ছিল দীর্ঘদিন। সেখানে এখন ঐতিহ্যবাহী ফসল ধান পাট গম তামাক এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অর্গানিক চা বাগান, স্ট্রবেরি ও কমলালেবুর বাগান গড়ে উঠছে কিন্তু এভাবে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে শুধুমাত্র তেঁতুলিয়াতেই প্রায় ৮০০ হেক্টর জমি অনাবাদী হয়ে পড়েছে। এ জমিগুলোতে দীর্ঘদিন আবাদ করা সম্ভব হবে না। এভাবে পাথর তুলে আমরা আমাদের কৃষি কাজের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট করছি।

পাথর তোলার কারণে শুধু কৃষি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপরেই প্রভাব পড়ছে না তা আক্রান্ত করছে মানব স্বাস্থ্যের উপরও। এসব অঞ্চলে বোমা মেশিনের প্রচণ্ড শব্দে মানুষ রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে না। শব্দ দূষণ মানুষের উচ্চরক্তচাপ হূদরোগ মাথাব্যথা ও অমনোযোগিতা বাড়ায় বিশেষ করে এই সমস্যায় ভোগে শিশু ও বৃদ্ধরা। আর পাথর কাটা, ক্রাশিক বা গুঁড়া করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ভোগে অন্য এক রোগে; একে বলে “সিলিকোসিস” বাংলাদেশে এটি নতুন রোগ। ২০০৯ সাল হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সরকারি ভাবে ১৭ জন রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এ রোগে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০০ বা এর অধিক। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর পাটগ্রামে আমিনুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়, তিনি টানা ৪ বছর পাথর ক্রাসিং বা গুঁড়া করার জাজে নিয়োজিত ছিলেন। সিলিকার ত্রিস্টাল নি:শ্বাসের সাথে শ্রমিকের ফুসফুসে যায় তার পর তা ধীরে ধীরে ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতাকে হ্রাস করে। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট ক্ষুধামন্দাসহ শরীর শুকিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। দারিদ্র্য শ্রমিক জীবিকার একমাত্র উত্স হিসাবে পাথর গুঁড়া ও কাটা কাজে নিয়োজিত হয় এবং ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় তা সে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক।

বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার জন্যই নুড়ি পাথর তোলা উচিত এবং তা গুঁড়া করাও প্রয়োজন। লালমনিরহাটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞাপন জারি করে নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তার পরও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ও নদী থেকেও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে দিনদুপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই। এভাবে আমরা নষ্ট করছি কৃষি জমি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং সর্বোপরি জেনে শুনে মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছি। সম্পদ যেমন সম্ভাবনা নিয়ে আসে তেমনি বিপদও নিয়ে আসে। সমুদ্রবক্ষের সম্পদ, মাটির তলায় গ্যাস ও কয়লা সম্পদ নিয়ে ‘এমনিতে আমরা বহুবিধ বিপদে আছি। গরীরের জন্য মূল্যবান সম্পদ অধিক চিন্তার বিষয়, আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এর উপযুক্ত উদাহরণ। নুড়ি পাথর নিয়ে এমন চিন্তার বিষয়ের দরকার নেই। বিদেশী কয়লা ও গ্যাসওয়ালাদের কাছে নুড়ি পাথর তেমন দামি নয় কিন্তু আমাদের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে নুড়িপাথর অত্যন্ত মূল্যবান; আর তাই এটি মাটি খুঁড়ে হোক আর নদীর তলদেশ থেকেই হোক তা তুলতে হবে। কিন্তু তা হতে হবে সঠিক নিয়ম মেনে পরিবেশের কোন ক্ষতি না করেই। আর এজন্য চাই সঠিক দিক-নির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা। সরকার কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়ে পাধর উত্তোলন করাতে পারে। তারা সঠিক নিয়মে পাথর তুলতে এমনিতে দীর্ঘ দিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে পাথর তোলার কারণে এই দুই জেলার কৃষি, পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ভূমিধস ও ভূমিকম্পনের ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা কেউ চাই না আমাদের সবুজ আবাদী জমিগুলো বড়বড় গভীর গর্তে পরিণত হোক অথবা পাথর,বালি আর কাঁকরে চাপা পড়ে থাক, বিলীন হয়ে যাক ধান পাট সবজি ইত্যাদি ফসল ফলানো জমিগুলো। আমরা চাই সুন্দর সবুজ সতেজ উর্বর ভূমি, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই প্রয়োজন।

 

লেখক :শিক্ষার্থী ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 


 

 

Source : Ittefaq

 

ধ্বংস হচ্ছে গারোপাহাড় : গাছ ও পাহাড় কাটা বন্ধ এবংবনায়ন জরুরি

Print

 

 

শাহরিয়ার মিল্টন

17th March, 2013

 

 

 

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের জীবনবৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের শেরপুর জেলা অংশের ২০ হাজার ৪৯ একর বনভূমি রয়েছে। পাহাড় ও বনখেকোর লোভে পড়ে উজাড় হচ্ছে বন। হারাচ্ছে ঐতিহ্য, বিলুপ্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।


প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, মাত্র ২০ বছর আগেও গারো পাহাড় বনাঞ্চলে দিনের বেলায় সূর্যের আলো মাটিতে পড়ত না। আর এখন বন উজাড়ের ফলে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে এই পাহাড়। অবাধে গাছ কেটে নেয়ায় কোনো কোনো এলাকা যেন ফুটবলের মাঠ।
বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার মধুটিলা, রাংটিয়া ও বালিয়াজুড়ি এই তিনটি বন বিভাগীয় রেঞ্জের আওতায় রয়েছে গারো পাহাড় বনাঞ্চল। এক সময় এই পাহাড় ও বনাঞ্চলে ছিল সেগুন, শাল, গজারি, কড়ই, গামারি, গর্জন, জারুল, মেহগনির মতো মূল্যবান গাছ। এছাড়াও ছিল আম, জাম, কাঁঠাল, বরই, আমলকী, বহেরা, হরীতকীসহ বিভিন্ন ফলজ ও ঔষধি গাছ। এই গারো পাহাড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কবিরাজ বা হেকিমরা ছুটে যেতেন ঔষধি গাছের জন্য। পাহাড় এলাকাতেও ছিল অসংখ্য কবিরাজের আস্তানা। কিন্তু সেসব গাছ-গাছড়া এখন বিলুপ্ত হওয়ায় ওইসব কবিরাজও তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন এবং মানুষও আয়ুর্বেদী চিকিত্সা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।


ওইসব প্রজাতির গাছের অনেকগুলোই এখন কতিপয় গাছ ও কাঠ ব্যবসায়ী এবং বনদস্যুদের অবাধে গাছ কাটার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সামান্য কিছু প্রজাতির গাছ থাকলেও সেগুলোও এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় এই গারো পাহড়ে বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, বানর, হনুমান, সজারু, ময়ূর, টিয়া, ময়না, খরগোশ, শূকর, বন মুরগি, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ অসংখ্য পশু-পাখির অবাধ বিচরণ ছিল।


অবাধে পরিবেশ ধ্বংস করে গাছ আর পাহাড় কাটাসহ পশু-পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্যের কারণে ওইসব পশু-পাখি অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে কালেভাদ্রে বানর, বন মোরগ, শূকর, কাঠবিড়ালি আর সামান্য কিছু সাপের দেখা মেলে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।


শেরপুরের গারো পাহাড়ে ওইসব পশু-পাখির বিচরণের কথাটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে কল্পকাহিনী বা ইতিহাস মাত্র। সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার হাতি পাগাড়, বারোমারি, সমশ্চূড়া, মধুটিলা, ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর, হলদিগ্রাম, সন্ধ্যাকুড়া, রাংটিয়া, হালচাটি, বড় গজনি, ছোট গজনি, বাকাকুড়া, দুধনই, তাওয়াকুচা, শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ী, রাজার পাহাড়, কর্ণঝোরা, খ্রিস্টানপাড়া, খাড়ামোড়া, রাঙ্গাজান, হাড়িয়াকোনা, বাবলাকোনাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতল বনভূমিতে এক সময় অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বানর ও হনুমান দেখা যেত। পাহাড়ে একজাতীয় চাম কাঁঠাল (ছোট ছোট আকারের কাঁঠাল) এবং পাহাড়ি কলা ছিল ওইসব বানর ও হনুমানের প্রধান খাদ্য। কিন্তু সেসব ফলের গাছ উজাড় হওয়ার ফলে বানর ও হনুমান খাদ্য সঙ্কটে পড়ে এর মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একইভাবে হরিণও বিলুপ্ত হয়েছে খাদ্য সঙ্কট এবং শিকারিদের খড়গে পড়ে। এছাড়া বাঘ-ভাল্লুকসহ অন্যান্য জীবজন্তু বিলুপ্ত বা পাহাড় ছেড়েছে গভীর জঙ্গলের আবাসস্থল লোকালয়ে পরিণত হওয়ায়।


অপরদিকে, বনের বিভিন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালি তাদের বসবাসের উপযোগী ও পরিবেশবান্ধব গাছ-গাছালি হারিয়ে যাওয়া এবং অবাধ বৃক্ষনিধনের ফলে এখন গারো পাহাড় এলাকায় কোনো পাখ-পাখালির কলরব শোনা যায় না।


এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বনদস্যু ও মুনাফালোভী কাঠ ব্যবসায়ীর যোগসাজশে উজাড় হয়েছে বন। এরপর ওইসব ন্যাড়া পাহাড়ে সরকার অংশীদার ভিত্তিতে সৃজনী বা উডলড বাগান তৈরি করা হচ্ছে গত প্রায় ১৫ বছর যাবত।
ওইসব বাগানে দেশীয় প্রজাতির কোনো গাছ না লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব নয় এমন ভিনদেশীয় আকাশমণি, ইউক্লিপটাস, বেলজিয়াম, মিনজিরিসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণের ফলে একদিকে পাহাড়ি মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ওইসব গাছে দেশীয় কোনো পাখি আবাসস্থল করতে না পেরে এবং তাদের খাদ্যের অভাবে পাখিদের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।


জানা গেছে, নব্বই দশকের শুরুতে গারো পাহাড় এলাকায় স্থানীয়রা প্রথমে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন শুরু করলে ওই বছরই পাহাড় ধসে ও মাটিচাপা পড়ে কয়েক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তত্কালীন সরকার পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।


জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সমশ্চূড়া, বুরুঙ্গা, কালাপানি, বাতকুঁচি, বারোমারি, দাওধরা, ডালুকোনা, কাঁটাবাড়ী, পানিহাতা, ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া, সন্ধ্যাকুড়া, হালচাটি, নকশি, বাঁকাকূড়া, গজনি, তাওয়াকুচা, গান্ধিগাঁও শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া, বালিজুড়ি, খারামোড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট গর্ত করে এবং পাহাড় কেটে অবাধে পাথর উত্তোলন করে গারো পাহাড় ধ্বংস এবং পাহাড়ের সৌর্ন্দয নষ্ট করা হয়েছে। এলাকার বেশকিছু জায়গায় কতিপয় প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে মূল্যবান চীনামাটি বা সাদামাটি ও কাচ বালি উত্তোলন করে দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের মহোত্সবে মেতে ওঠে। পরে ওইসব পাহাড় কাটাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
জেলায় গত ২০ বছরে সরকারি হিসেবে মাটিচাপায় ৩০ শ্রমিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও স্থানীয় সূত্রমতে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ৭০ এবং পঙ্গু ও আহত হয়েছেন শতাধিক শ্রমিক। অপরদিকে ওইসব পাথর ব্যবসায়ী বেকার হওয়া পাথর শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের দিয়ে বন ধ্বংসে নামিয়ে দেয়। ফলে গত তিন-চার মাস ধরে শুরু হয়েছে গাছ কাটার মহোত্সব।


গারো পাহাড়ের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন শাল-গজারি বাগান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতি রাতেই মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ওইসব গাছ চোর সিন্ডিকেট সদস্য। বিশেষ করে জেলায় গজনি বিটে বর্তমান বিট অফিসারের ছত্রছায়ায় ব্যাপকভাবে চলছে গাছ কাটার মহোত্সব।


সূত্র জানায়, ওই সিন্ডিকেট চক্র বন বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং পুলিশ ও বিডিআর সদস্যদের যোগসাজশে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে গাছ কাটা। তবে লোকদেখানো ভান করে প্রশাসন মাঝেমধ্যে দুয়েকটি কাঠের চালান আটক করলেও তা আবার গোপনে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ওই সিন্ডিকেট চক্র। শেরপুর শহরের প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কাজে এবং ব্যক্তিগত বহুতল বাড়ি নির্মাণে পাইলিং করতে প্রকাশ্যে গজারি গাছ ব্যবহার করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকছে নীরব।


সূত্র আরও জানায়, বন বিভাগ চুরি যাওয়া গাছের চিহ্ন মুছে ফেলতে রাতারাতি চুরি যাওয়া গাছের গুঁড়ি উপড়ে ফেলে। এছাড়া বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী বনের কোনো গাছ চুরি গেলে তা নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হয়। কিন্তু বন বিভাগ তা করে না। তবে গাছ চুরির ব্যাপারে বন বিভাগের সঙ্গে বনিবনা না হলে এবং তাদের স্বার্থে কেউ ব্যাঘাত ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক গাছ চুরির মামলা ঠুকে দেয় বলে পাহাড়ি এলাকার একাধিক নিরীহ গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।


ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধিগাঁও গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, বন এলাকায় যেদিন শেরপুর-ময়মনসিংহ বা ঢাকা থেকে বন বিভাগের বড় কর্তারা বন পরিদর্শনে আসে ওই রাতেই শুরু হয় গাছ কাটার মহোত্সব। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বনে এলে তাদের আপ্যায়ন বাবত খরচ ও সালামি দিতে হয় সংশ্লিষ্ট বিট অফসারকে। ফলে এই খরচের টাকা তুলতে স্থানীয় অসাধু গাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করে ওই রাতেই বেশকিছু গাছ কেটে বিক্রি করে তাদের খরচ তুলতে হয়। ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনি বিট অফিসার মো. শাহানশাহ আলম তার এলাকায় গাছ কাটার মহোত্সবের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বন বিভাগের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের উত্থাপিত আভিযোগ অস্বীকার করে রাংটিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বর্তমানে পাহাড় কাটা সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে লোকবল সঙ্কটের কারণে বনের গাছ কাটা রোধ শতভাগ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। শেরপুরের বিশিষ্টজনদের মতে, গারো পাহাড় রক্ষায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া উচিত। সেই সঙ্গে অবাধে পাহাড় ও বন কাটা বন্ধ করে দেশীয় প্রজাতির ফলমূলসহ নানা বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করে এবং বনায়ন করে হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 


 

 

Source: amardeshonline

 

 


 

 

{jcomments on}

 

নেই নজরদারি বা নীতিমালা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ, পর্যটন

Print

 

 

নেত্রকোনায় ‘যথেচ্ছ’ সাদা মাটি উত্তোলন
শরিফুল হাসান | তারিখ: ২৪-০২-২০১২

 


নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় টিলা কেটে দেদার সাদা মাটি তোলা হচ্ছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও পর্যটন-সম্ভাবনা। সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন সাহাদাত পারভেজ
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। নেই সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর তদারকি। দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন টিলা ও খনি কেটে সাদা মাটি তোলা হচ্ছে এভাবেই। এর ফলে সরকার যেমন যথাযথ রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও পর্যটন-সম্ভাবনা।

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর ১৯৫৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, এ এলাকায় সাদা মাটি বা চীনামাটির মজুদ ২৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এটি বাংলাদেশের ৩০০ বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম বলে তখন বলা হয়েছিল।

সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হয় দুর্গাপুরের সাদা মাটি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে এই মাটি সংগ্রহ করছে।

তবে ঢাকার বাইরে ব্যুরোর কোনো দপ্তর না থাকায় কী পরিমাণ মাটি কাটা হচ্ছে, তা দেখার কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে, এ সুযোগে ইচ্ছামতো সাদা মাটি তোলা হচ্ছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেকবার আপত্তি তুললেও দুর্গাপুরের সাদা মাটির টিলা কাটা বন্ধ বা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আসেনি। এ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভ্রান্তি রয়েছে পাহাড় কাটাসংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ নিয়েও।

অতিরিক্ত মাটি তোলার অভিযোগ: স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনুমতির চেয়ে বেশি মাটি তুলছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১০টি প্রতিষ্ঠান অনুমতি নিয়ে দুর্গাপুরের সাদা মাটি তুলে থাকে। এগুলো হলো: তাজমা সিরামিক, ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি, পিপলস সিরামিক, জাকের রিফ্র্যাক্টরি অ্যান্ড টাইলস এন্টারপ্রাইজ, মোমেনশাহী সিরামিক অ্যান্ড গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ, চায়না বাংলা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জার্ডিন ইন্টারন্যাশনাল, বেঙ্গল ফাইন সিরামিক এবং মেসার্স এস আর ইন্টারন্যাশনাল। অভিযোগ আছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও স্থানীয় একটি মহল অনুমতি ছাড়াই মাটি কেটে বিক্রি করছে।

সমস্যা হচ্ছে, অনুমতি নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতই কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করছে, তা নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার অনেকেরই দাবি, এ ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার চলছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ওজন স্কেল ও তল্লাশি চৌকি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, স্থানীয় সাংসদসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি।


দুর্গাপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল সায়াদাৎ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানকার সাদা মাটির পাহাড় ও টিলাগুলো দেখতে অনেক পর্যটক আসে। কিন্তু এগুলোতে যেন এখন লুটপাট চলছে। যে যেভাবে পারছে, সব সাদা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ঢাকা থেকে অনুমতি নিয়ে আসে। আমাদের শুধু অনুলিপি দেওয়া হয়। ফলে কী পরিমাণ মাটি তোলা হচ্ছে, কীভাবে তোলা হচ্ছে, সে সব আমরা জানি না।’

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, সাদা মাটি তোলার অনুমতি দেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশের ক্ষতি না করা, এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট না করাসহ নয়টি শর্ত দেওয়া হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অনবরত বহু ট্রাকের চলাচল এলাকার নৈসর্গিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য তো বটেই, রাস্তারও ক্ষতি করছে।

আদিবাসী উচ্ছেদের অভিযোগ: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় আদিবাসী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, সাদা মাটির জন্য অনেক আদিবাসীকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীরা এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগও দিয়েছেন।


১ নম্বর কুল্লাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমান পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এলাকায় নয়টি খনি এলাকা আছে। এক একটি খনি এলাকায় চার-পাঁচটি টিলা আছে। এগুলো ইচ্ছামতো কেটে ফেলা হচ্ছে। এখানে অনেক আদিবাসী থাকত। তাদের অনেককেই টাকা-পয়সা দিয়ে বা জোর করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

চার বছরেও তৈরি হয়নি সুপারিশমালা: সাদা মাটি সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিতভাবে সংগ্রহ ও সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সুপারিশমালা তৈরি করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ১০ জুন উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, খনিজ সম্পদ বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং সিরামিক ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিনিধি রাখা হয়। তবে চার বছর হলেও ওই কমিটি এখনো সুপারিশমালা তৈরি করতে পারেনি।


পরিবেশ আইন মানা হচ্ছে না: ২০১০ সালে পাস হওয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে যেকোনো ধরনের পাহাড় ও টিলা কাটা অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই আইন পাসের পরও দুর্গাপুরের টিলা কাটা চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে মাটি কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিরামিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। কিন্তু সেখানে বলা হয়নি খনিজ সম্পদ থাকলে সে ক্ষেত্রে কী করা হবে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আমরাও সমস্যায় পড়ছি। সরকারের এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী সব ধরনের পাহাড় ও টিলা ‘কর্তন ও মোচন’ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অনুমতি দেওয়া হলেও সে জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু দুর্গাপুরে কাউকে এ ধরনের কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কাজেই খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: খনিজ সম্পদ ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, লোকবলের অভাবে তাঁদের পক্ষে নেত্রকোনার কার্যক্রম দেখভাল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, ব্যুরোর সব মিলিয়ে কর্মকর্তা মাত্র সাতজন। ব্যুরোর পরিচালক আবু মো. নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রকোনায় কী হচ্ছে সেটি আমরা সার্বক্ষণিকভাবে দেখতে পাই না। তবে আমরা সীমিত সাধ্য নিয়েও চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যেই আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে যান।’

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক আনিস মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে কোনো ওজনস্কেল নেই। চেকপোস্ট নেই। ফলে সবকিছু তদারকি করা সম্ভব হয় না। তার পরও আমরা চেষ্টা করি। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা করার জন্য আমরা খনিজ সম্পদ ব্যুরোতে প্রস্তাব দিয়েছি।’


Source : Prothom Alo

 

জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে: জাফলংয়ে পাহাড় কাটা

Print

 

 

তারিখ: ০৩-১২-২০১২

 

সমতল বাংলাদেশে উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা এমনিতেই কম—বৃহত্তর চট্টগ্রাম আর সিলেট। এই সিলেটের জাফলংয়ে সবচেয়ে উঁচু যে পাহাড়টি রয়েছে, সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, পাহাড়টি কাটা হচ্ছে, রাস্তা বানানোর জন্য। রাস্তাঘাট বানানো যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি বলে যুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি যে আজকের দুনিয়ায় এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা নীতিনির্ধারকেরা ভুলে যান।

জাফলং একটি পর্যটন এলাকা, প্রকৃতির টানে এখানে অনেকে আসেন। এখানকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় কেটে রাস্তা হচ্ছে এবং সেটা করছেন এক প্রভাবশালী ভূমি ব্যবসায়ী। রাস্তা নির্মাণের পেছনে জনস্বার্থের কথা বললেও এটা পরিষ্কার যে তিনি যা করেছেন তা ব্যক্তিস্বার্থে। কারণ, তিনি ওই অঞ্চলে যে রিসোর্ট করার পরিকল্পনা করছেন এ জন্য এই রাস্তা বানানো দরকার হয়ে পড়েছিল। এ ধরনের পাহাড় কাটতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি লাগলেও তিনি তা নেননি। এবং পাহাড় কেটে চলেছেন দুই সপ্তাহ ধরে। তিনি নিজেকে ভূমির মালিক দাবি করলেও কাগজপত্র বলছে, জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি। এর পরও তিনি এত সব করতে পেরেছেন, কারণ তিনি একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ বা প্রশাসনের যে ভালো যোগাযোগ রয়েছে, সেটাও স্পষ্ট।

পাহাড় কেটে এরই মধ্যে ৭২ শতক জায়গা সমান করে ফেলা হয়েছে। পাহাড়ের কাটা অংশ থেকে পাথর বের করে এরই মধ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের টনক নড়তে সময় লাগে, এত পরিমাণ কাটাকাটির পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী এবং স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই পাহাড় কেটেছেন বলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যখন দাবি করেন তখন এ ধরনের নির্দেশে কতটুকু কাজ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা মনে করি, পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। অনুমতি ছাড়া পাহাড় কেটে তিনি যে আইন ভঙ্গ করেছেন তার বিহিত করাও জরুরি।

 

 

 

Source: prothom-alo


{jcomments on}

 
| + - | RTL - LTR