আবদুল গোফরান ভূঁইয়া, মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)
17th March, 2013
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে সেচ সঙ্কটে পানির অভাবে ফসলি জমি ফেটে চৌচির, কোথাও বা ইরি ক্ষেত পরিণত হয়েছে গো-ছাগলের চারণভূমিতে। নষ্ট হওয়ার পথে কৃষকের চাষ করা হাজার হাজার হেক্টর ইরি জমির ধান। ক্ষতির আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। মূলত অনাবৃষ্টি ও সেচ সঙ্কটই এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। চলতিমৌসুমে আবাদকৃত ফসল গোলায় তুলতে পারবেন কিনা এ চিন্তায় কৃষকদের মাথায় হাত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষীরা ইরি চারা রোপণ করেছে। আশানুরূপ ফসল ফলাতে রাত-দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছে, তাদের ইরি ফসলই একমাত্র অবলম্বন এতদাঞ্চলের কৃষকদের। মনোহরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার গোলাম সরোয়ার জানান, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ২শ’ হেক্টর জমি আবাদের টার্গেট নিয়ে এরমধ্যে ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক কৃষক আশা, ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিও ও মাল্টিপারপাস থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বর্গা জমিন চাষ করে, এমন কৃষকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু মৌসুমের শেষদিকে এসে সেচ সঙ্কটে তাদের সব আশা যেন বাড়া ভাতে ছাই হয়ে যায়। এ সঙ্কটের অন্যতম কারণ হচ্ছে অনাবৃষ্টি। ফাল্গুন শেষে চৈত্রের মাঝেও কোনো রকম বৃষ্টি না হওয়ায় এক পশলা বৃষ্টির জন্য কৃষকের হাহাকার। এতদাঞ্চলের পানির একমাত্র উত্স দেশের নামকরা ডাকাতিয়া নদী, নদনা খাল, বক্সগঞ্জ খাল, বাইশগাঁও খাল, সিএনবি খালসহ অনেকডোবা ও নালা। কিন্তু এ ডাকাতিয়াসহ অন্যান্য খাল-বিলগুলো বছরের প্রায় ৭ মাসই থাকে পানিশূন্য। কারণ হচ্ছে এ ডাকাতিয়ার এখন প্রভাবশালী ভূমি রাক্ষসদের দখলে চলে গেছে। অনেক জায়গাই ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ডাকাতিয়ায় এখন বসতবাড়ি, দালানকোটা গড়ে ওঠেছে। অন্যদিকে বক্সগঞ্জ, নদনা ও সিএনবি খালসহ এলাকার নালাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য বাঁধ। এসব বাঁধের জন্য উজানের পানি নেমে না আসার কারণে একদিকে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে উজানের পানি বিভিন্ন খাল বেয়ে ডাকাতিয়া পর্যন্ত গড়াতে না পারায় ডাকাতিয়ায় সৃষ্টি হয় পানিশূন্যতা। বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক যে পানি তা ৪-৫ মাসেই শুকিয়ে বছরের বাকি সাত মাস ডাকাতিয়া খালে পানিশূন্য। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ডাকাতিয়াসহ স্থানীয় খালগুলো পুনঃখনন, বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি স্বার্থে নির্মিত বাঁধগুলো কেটে দেয়া এবং অবৈধ নদী ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরি। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বৃহত্তর লাকসাম সফরকালে তখন ডাকাতিয়া নদী খনন ও প্রয়োজনীয় স্থানে স্লুইচ গেট স্থাপনের জোর দাবি ওঠে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। পরবর্তী সময়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলে লত্সর, দাড়াচোঁ খাল খনন উদ্বোধনকালে তত্কালীন এমপি ডাকাতিয়া নদীর চিতৈষী পোমগাঁও নামক স্থানে রেগুলেটর পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে পানি মজুতের ব্যবস্থা করে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
Source: amardeshonline
{jcomments on}