তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
সময়মত ড্রেজিং না করা, অবৈধভাবে দখল, মাটি ফেলে ফসলের জমি কিংবা স্থাপনা তৈরি, উত্স মুখে বাঁধ ও অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট তৈরি ইত্যাদি কারণে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে এবং চর পড়ে এককালের উত্তাল নরসুন্দা নদ আজ স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। এ শুকনো মৌসুমের শুরুতেই নরসুন্দা নদ শুকিয়ে গেছে। নাব্য সঙ্কট নরসুন্দাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নরসুন্দা নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা। নদীর তলদেশে পানি না থাকায় সেচনির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহা সঙ্কটে। নরসুন্দা নদের দু’পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি, অতিদ্রুত নদের ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। এসব কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল, পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বোরো জমিতে সেচের কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসিনতা আর অবহেলার কারণে এরই মধ্যে এ অঞ্চলের প্রধান নরসুন্দা নদ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুরমা ও কুশিয়ারার উজানে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে এই বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের এ নদ হারিয়ে গিয়ে মরু প্রক্রিয়া শুরু হবে। দেখা দিবে জলবায়ুর ভয়াবহ পরিবর্তন। সরেজমিনে নরসুন্দা নদ এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪০ বছরেও কোনো ড্রেজিং না করায় নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস পেয়ে এককালের উত্তাল নদ ছন্দ হারিয়ে আজ মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মত্স্য সম্পদ ও নানা জলজপ্রাণী। হাজার হাজার জেলে পরিবার পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘুচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়াপারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চালিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা খালগুলো এখন বিত্তবানদের ফসলি জমি। নরসুন্দা তীরবর্তী দু’পাশের কয়েক লাখ হেক্টর জমির সেচ ব্যবস্থা এ নদের পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে মূল নদে পানি না থাকায় সেচ ব্যবস্থা সঙ্কটের মুখে পড়েছে। নদীর পানিতে যেসব গরিব কৃষক স্বল্পখরচে সেচ ব্যবস্থার আওতায় ছিল তাদের এখন মাথায় হাত। বিত্তবান কৃষকরা গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যারা নগদ টাকা দিতে পারছে তারাই শুধু পানি পাচ্ছে। এ সুযোগে একশ্রেণীর মহাজন চড়া সুদে হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকদের কষ্টার্জিত ফসলের টাকা। শুকিয়ে যাওয়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে শুকনো মৌসুমে টিউবয়েলের পানি না ওঠায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। জলবায়ুর সঙ্কট ও নদের পানি শূন্যতায় এসব এলাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। পানির প্রবাহ না থাকায় নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। এ সুযোগে এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাকে কৌশলে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী মহল কোটি কোটি টাকার বালু ও মাটির অবৈধ বাণিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব, অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন এলাকা, বড় ব্রিজ ও কালভার্ট। শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখলে নিতে প্রতি মৌসুমেই সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এ অঞ্চলের সেই প্রসিদ্ধ পাট গুদামসহ অসংখ্য শিল্প-কারখানা গুটিয়ে নেয়া হয়েছে।