হাফিজুর রহমান, হবিগঞ্জ | তারিখ: ১৯-০৪-২০১৩
তীর থেকে সোনাই নদের দেড়-দুই শ ফুট ভেতরে ঢুকে মাটি ভরাট করে দশতলা ভবন তোলা হচ্ছে। হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সোনাই নদ থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি
ছয় মাস বন্ধ থাকার পর হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সোনাই নদ জায়গায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপ আবারও ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। সায়হাম গ্রুপ কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা তাদের নিজস্ব জায়গায় ভবনটি নির্মাণ করছে।
তবে পরিবেশবাদী সংগঠন বলছে, পয়স্তি ও শিকস্তি আইন অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পরবর্তীকালে তা যদি ভূমিতে রূপান্তরিত হয়, তাতে আর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। সেই ভূমি হয়ে যায় সরকারের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মুখে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ভবনের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাড় থেকে নদের ভেতরে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট জায়গা ভরাট করে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বাঁকের সৃষ্টি হয়েছে। পাড়ে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স’। ভবনের পাইলিংয়ের (ভিত্তি) কাজ শেষ। বর্তমানে শ্রমিকেরা পিলার তৈরির কাজ করছেন।
সায়হাম গ্রুপ কর্তৃপক্ষ জানায়, সোনাই নদ লাগোয়া তাদের তিন একর ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের সময় ৫৬ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার। বর্তমানে তাদের দুই একর ৪৪ শতক জমি রয়েছে। এ জমির ৪৫ শতাংশ জায়গাজুড়ে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট কমপ্লেক্সটি তৈরি করা হচ্ছে। আবাসন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স ভবনটির নির্মাণের কাজ করছে।
এলাকাবাসী জানান, সোনাই নদ উপজেলার মঙ্গলপুর, আফসলপুর, রাজাপুর, হরিষশ্যামা ও নোয়াগাঁও গ্রাম হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাতবর্গ গ্রামে তিতাস নদীতে মিশেছে। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত।
সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স ও সায়হাম গ্রুপ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সৈয়দ মো. শাহজাহান বলেন, পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের পর প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে। তদন্তের প্রতিবেদন তাদের পক্ষে এসেছে।
নদের জায়গায় ভবন নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সফিউল্লাহ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। শুনেছি, বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাপজোখ করে দেখা গেছে, স্থাপনাটি নদের জায়গায় পড়েনি। তার পরও যদি আবার অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে নতুন করে মাপজোখ করে দেখা হবে।’
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন জাহান বলেন, ‘এ উপজেলায় দেড় বছর ধরে কাজ করছি। এটি নদী কি না আমার জানা নেই। এ ছাড়া এটি নদীর জায়গা হলেও আমার পূর্বে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কিছুই করে যাননি। এখন আমার আর কিছু করার নেই।’
বাপার জাতীয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নদী দখল বা ভরাট করতে পারে না। এটি জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হবিগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, ‘শিকস্তি আইন অনুযায়ী এ ভূমি প্রশাসনের। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
Source: prothom-alo