English French German Italian Portuguese Russian Spanish

Related Articles

Search

বাগেরহাট BagerHat

ভরাট হয়ে গেছে বাগেরহাটের ২২ নদী

Print

রবিউল ইসলাম বাগেরহাট

পুঁটিমারী, বিষনা, দাউদখালী, মংলা, ভোলা, ঘষিয়াখালী, কালীগঞ্জ-খোন-াকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর-ভাষা, বেমরতা- দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী, দোয়ানিয়া, যুগিখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা। এগুলো বাগেরহাটের এক সময়ের প্রমত্তা নদী। অতিরিক্ত পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে এসব নদী। এ ছাড়া অতিরিক্ত পলিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে জেলার তিন শতাধিক ছোট-বড় খাল। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ইতোমধ্যে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে এই ২২টি নদী। বাগেরহাটের ৯ উপজেলার ওপর দিয়ে বহমান এসব নদীতে একসময় লঞ্চ, স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল চলাচল করত। এখন তা শুধুই স্মৃতি। এসব নদীর অবস'া এতই শোচনীয় যে ভাটির সময় হাঁটু পানিও থাকে না। শুকিয়ে যাওয়া এসব নদী দেখে এই জনপদের মানুষ এখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন আর স্মরণ করছেন নিকটাতীতকে। এ সরকারের আমলে বর্তমান ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবের বাড়ি বাগেরহাট জেলায় হলেও এসব নদী সরকারিভাবে ড্রেজিং বা খনন করে সচল করার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এক দিকে যেমন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মংলার সাথে সারা দেশের সহজে কার্গো ভ্যাসেলসহ নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে; তেমনি ঢাকা-খুলনা স্টিমার ও ঢাকা-বাগেরহাট লঞ্চ সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য দিকে নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা চাষাবাদ করতে শুষ্ক মওসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে বেড়িবাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি না উঠতে পারা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) পাঁচটি পোল্ডারের ১৬৫টি স্লুইচ গেটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটির পানি নামার সময় ফ্লাপ গেটগুলো সবসময় বন্ধ থাকছে। অন্য দিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে নদীগুলোতে উজানের পানি না আসায় দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি সি'র হয়ে থাকায় অতিরিক্ত পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ ছাড়া সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভাটার সময় দ্রুত নেমে যেতে না পারায় ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরাশক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি। বাগেরহাটের শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, মংলা বন্দর থেকে ঘষিয়াখালী নদী হয়ে বন্দরের সাথে সহজ যোগাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদরসংলগ্ন নদীতে এ বছর ড্রেজিং করা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের পরপরই অতিরিক্ত পলি জমে নৌরুটটি আবার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার এই নৌরুটটি আবারো ড্রেজিংয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছে। এ ছাড়া ভরাট বলেশ্বর নদী খননকাজ শুরু হয়েছে। অন্য সব ভরাট নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়ে সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। চলতি অর্থবছরে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে ৬৬টি খাল খননের প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাগেরহাট পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক ওসমান গনি জানান, নদী-খাল ভরাট হওয়ায় স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ রয়েছে; যে কারণে ময়লা-আবর্জনা, বিভিন্ন মলমূত্র যেখানে সেখানে পড়ে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বজলুর রশীদ বলেন, নদী-খাল ভরাট হওয়ায় দেশী প্রজাতির মাছ উৎপাদন কমে গেছে। অন্য দিকে সমুদ্রের লোনা পানি বদ্ধ হয়ে দেশী সরপুঁটি, পাবদা, শিং, মাগুর, খলিশা, গজাল, চুচড়া, চাঁন্দা, রয়ভেদাসহ অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

 

 

Source : Noya Digonto

 

 

 


 

 
| + - | RTL - LTR