লেখক: জামালপুর প্রতিনিধি | শনি, ৩ মার্চ ২০১২, ২০ ফাল্গুন ১৪১৮
|
জামালপুরে যমুনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ নির্মাণাধীন কাজ গত বছর শুরু হলেও এবার শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধের ডাম্পিং কাজ শুরু হয়। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় পারিসা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এমএস কনস্ট্রাকশন এবং ভাওয়াল ট্রেড কনস্ট্রাকশন। তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাওয়াল ট্রেড কনস্ট্রাকশন অতি বিলম্বে এবং ভরা বন্যায় কাজ শুরু করায় শুরুতেই দু’টি স্পটে প্রায় ১৫০০ মিটার ডাম্পিং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
|
পাউবো সূত্রে জানা গেছে যমুনার বাম তীর দেওয়ানগঞ্জের ফুটানীবাজার থেকে শুরু করে ইসলামপুরের পার্থশী সীমানা পর্যন্ত ২কি.মি. ইসলামপুর উপজেলায় ৫ কি.মি.এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় ৩ কি.মি. এলাকায় ডাম্পিং এবং কংক্রিট ব্লক দ্বারা পাইলিং করার অনুমোদন পায়। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল— এই ৩ বছরের মধ্যে ৩৬৬ কোটি টাকায় কাজ সমাপ্ত করার কথা রয়েছে।
প্রথম বছর জিওট্রেক্স ব্যাগে বালি ভর্তি করে ডাম্পিং দ্বিতীয় বছর ডাম্পিং-এর সাথে কংক্রিট ব্লক তৈরি করে পাইলিং কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। ২০১১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ২৪ কোটি টাকা এবং জুলাই/১১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর/১১ পর্যন্ত ২১ কোটি টাকা সর্বমোট ৪৫ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। অথচ ৩৬৬ কোটি টাকার কাজ ৩ বছরে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এ বছর মাত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৭ কোটি টাকা যা চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম অতিবাহিতের পরও কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্রমশই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। গত ২০ বছরে যমুনার ভাঙ্গনে এলাকার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে অসহায়-সম্বলহীন মানুষের ভিড়।
যমুনা ভাঙ্গনে দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী রেলফেরি বাহাদুরাবাদ ঘাট ও নৌ-থানা নদীতে বিলীন হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি, ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ২৫টি সরকারি ও রেজিটার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়,পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,তিনটি দাখিল মাদরাসা, একটি ফাজিল মাদরাসা, ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নয়টি পোষ্টঅফিস,সাতটি বাজার, নোয়ারপাড়া কৃষি অফিসসহ অসংখ্য পাকা ও কাঁচা রাস্তাঘাট ও কোটি টাকা মূল্যের ২টি ব্রিজ,অসংখ্য কার্লভাট। এছাড়া নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৭৫%, বেলগাছার ৭০% ও কুলকান্দী ইউনিয়নের ৭৫%, পাথর্শীর ৩৫ ভাগ জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। পাথর্শী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসমত আলী খান জানান, গত দু’বছরে তার ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার রেল লাইনসহ ৩৫% এলাকা নদীতে বিলিন হয়েছে।
নদী ভাঙনের কারণে ইসলামপুরে ছয়টি ইউনিয়নের নির্বাচন ৯ বছর যাবত্ স্থগিত রয়েছে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইতোমধ্যে যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নদী থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও জিল বাংলা চিনিকল ০.৭৫ কিলোমিটার এবং ইসলামপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। যমুনার বাম তীর গত ২০ বছরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেঙ্গে পূর্বদিকে সরে এসেছে। এ ব্যাপারে বিগত দিনে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ পায়। সরকার যমুনার বাম তীর সংরক্ষণের জন্য ৩ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। জামালপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নিজামুল হক ভুইয়া জানান, ইতিমধ্যে বরাদ্দকৃত ৭ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। তবে বরাদ্দ অপ্রতুল বলে জানান।
Source : Ittefaq