English French German Italian Portuguese Russian Spanish

Related Articles

Search

পদ্মা Padma

পদ্মায় আ.লীগের নেতাদের বাঁধ

Print

 

 

এম রাশেদুল হক, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) | তারিখ: ১৪-০৪-২০১৩

 

মাছ শিকারের জন্য পদ্মা নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ছবিটি গত বুধবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কোনঠাদিয়া এলাকা থেকে তোলা

প্রথম আলো

 

 

 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের কোনঠাদিয়া ও মানিকগঞ্জের কাঞ্চনপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর প্রায় দুই কিলোমিটারে বাঁশের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার চলছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা তিন মাস আগে বাঁধটি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়ায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।


১০ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে কোনঠাদিয়া মৌজা। কোনঠাদিয়ার এক পাশ থেকে বাঁধটি শুরু হয়ে মানিকগঞ্জের কাঞ্চনপুরে গিয়ে ঠেকেছে। বাঁধজুড়ে মাছ ধরার জাল পাতা। নৌযান চলাচলের জন্য বাঁধের এক পাশে ২০-২৫ ফুট জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। সেদিক দিয়ে ফরিদপুরের সঙ্গে মানিকগঞ্জ, ঢাকা, দৌলতদিয়া, আরিচার কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনঠাদিয়ার স্থানীয় দুই বাসিন্দা বলেন, বাঁধের কাছে এসে পণ্যবাহী ট্রলারগুলোর গতি কমে যায়। বাঁধে পাহারার দায়িত্বে থাকা জেলে-শ্রমিকেরা তখন পাতা জাল পানির নিচে ঠেলে দেন। এরপর পার হতে হয় নৌযানগুলোকে।


সরেজমিনে বাঁধের কাছে আটটি নৌকায় জেলেদের মাছ তুলতে দেখা গেল। নদীর কিনারে আরও নয়টি নৌকার প্রতিটিতে দু-তিনজন জেলে-শ্রমিক বসে আছেন। বাঁধের ফাঁকা স্থানে নৌকায় সাগর বিশ্বাস ও হালিম শেখ নামের দুজন পাহারা দিচ্ছেন। তাঁরা জানান, প্রতিদিন ৩০০ টাকা বেতনে পাহারা দেন তাঁরা। হাজার পাঁচেক বাঁশের এই বাঁধ তৈরিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেগেছে। বাঁধে পাইরজাল, ঘরজাল, গুটিজাল পাতা রয়েছে। তাতে ইলিশ, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির বড় মাছের পাশাপাশি অনেক ছোট মাছও আটকা পড়ে।


বাঁধে মাছ ধরায় ব্যস্ত পাবনার বেড়া উপজেলার ত্রিমোহনীর ভৈরব সাহা, কালাম খাঁ ও সুজন জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার মাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বিল্লাল বেপারী, আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস বেপারী, আওয়ামী লীগের সমর্থক নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের হারুন ও দুলাল শেখ এই বাঁধ দিয়েছেন। তিন-চার মাস ধরে ৩০ জন জেলেসহ মোট ৩৭ জন এখানে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মাসিক আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন পান। অন্যরা মাছের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ পান। বাঁধে প্রতিদিন কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে—এমন প্রশ্নের কোনো জবাব জেলে-শ্রমিকেরা দিতে পারেননি। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, শুধু তাঁদের বেতনের পেছনেই মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়।


বিল্লাল বেপারী দাবি করেন, তিনি কখনোই নদী, বিল দখলে জড়িত ছিলেন না; এখনো নেই। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, কুদ্দুস বেপারী বাঁধের সঙ্গে জড়িত। কুদ্দুস বেপারী ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য।’ কুদ্দুস বেপারীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।


মাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি, বাঁধের সঙ্গে কুদ্দুস বেপারী জড়িত। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কুদ্দুস বেপারী দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। তবে তিনি আওয়ামী লীগ করেন।


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান বলেন, ‘নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার আইনত নিষিদ্ধ। সেখানে যাঁরা বাঁধ দিয়েছেন, তাঁরা ফরিদপুরের লোক। মাস খানেক আগে বাঁধটি অপসারণে নোটিশ দিয়েছিলাম, কিন্তু এখনো যে তা সরানো হয়নি, জানা ছিল না। দুর্গম অঞ্চল বলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া কোনো পথ নেই।’


গোয়ালন্দের ইউএনও ছরোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

 

 

 

Source: prothom-alo

 

 


 

 

 

{jcomments on}

 
| + - | RTL - LTR