লেখক: কাজীরফিক, টঙ্গী সংবাদদাতা | বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, ৫ আশ্বিন ১৪১৯
টঙ্গীর বিখ্যাত কহরদরিয়া (তুরাগ নদী) দূষণে জর্জরিত হয়ে এখন মৃতপ্রায়। এলাকার বিভিন্ন ডাইয়িং ও ড্রাই ওয়াশিং কারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে নদীর পানি এখন বিষে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর দুই পাশ জুড়ে রয়েছে টঙ্গী পৌরসভার দুই শতাধিক ড্রেন লাইন। যেখান দিয়ে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা নদীতে পড়ছে। টঙ্গীর অধিকাংশ ডাইয়িং-এর বর্জ্য ও ওয়াশিং ফ্যাক্টরির কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পুরো এলাকায়। এতে এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে এ বর্জ্য শোধনাগার ইফুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) সর্বক্ষণ চালু রাখার জন্য প্রতিনিয়ত বেশ কিছু ফ্যাক্টরিকে জরিমানা করছে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে টঙ্গীর বিভিন্ন কারখানা নদীতে বর্জ্য ফেলছে। এদের মধ্যে নোমান গ্রুপের জাবের এন্ড জুবায়ের, ঢাকা ডাইয়িং, হোসেন ডাইয়িং এন্ড ওয়াশিং ফ্যাক্টরির বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্যে তুরাগ নদী এখন ধ্বংসের পথে। তুরাগ নদীকে বাঁচানোর জন্য সরকারসহ গাজীপুর জেলা পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন একাধিক প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে আসছে। তাদের মানববন্ধনে কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গাজীপুর জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি মো. আনোয়ার সাদত বলেন, শিল্প-কারখানার বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য, কালোধোঁয়া, গ্যাস, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নদী ও পার্শ্ববর্তী বিল ও জলাশয়ের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে জলজপ্রাণী ও ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। টঙ্গী উন্নয়ন পরিষদ সভাপতি মোস্তফা হুমায়ুন হিমু বলেন, এলাকার হাতেগোনা কিছু ডাইয়িং কারখানার দূষিত কেমিক্যাল ও বর্জ্যের হাত থেকে তুরাগ নদীকে বাঁচাতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সূত্রে জানা যায়, জাবের এন্ড জুবায়েরের বর্জ্য কারখানায় গোপন একটি ড্রেন লাইন দিয়ে সরাসরি তুরাগ নদীতে ফেলা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পর্যবেক্ষণে গেলে সাথে সাথে ইটিপি চালু করা হয়। সূত্র আরো জনায়, ইটিপি চালু করলে খরচ বেড়ে যায়। তাই কোম্পানি খরচ কমাতে গোপন লাইন দিয়ে বর্জ্য ও দূষিত পানি তুরাগ নদীতে ফেলছে। এ ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করতে গেলে জাবের এন্ড জুবায়ের ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ জানায়, মিডিয়ার কর্মীদের এখানে প্রবেশ করা নিষেধ। পরে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল কুদ্দুসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত বলে জানান এবং এ ব্যাপারে কোন উত্তর দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এদিকে ঢাকা ডাইয়িং কারখানায় ইটিপি থাকলেও কোনদিন চালু করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের গোপন ড্রেন থাকায় ইটিপি মেশিন চালাতে হয় না। এ ব্যাপারে ম্যানেজার আব্দুস ছালামের সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এছাড়াও হোসেন ডাইয়িং ফ্যাক্টরি সবার সাথে পাল্লা দিয়ে একইভাবে বর্জ্য ফেলছে বলে জানা গেছে। বর্জ্য ও দূষিত পানি নদীতে ফেলার জন্য প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান থাকলেও আইনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত এ কারখানাগুলোকে একাধিকবার জরিমানা করার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ জরিমানা দিতে রাজি কিন্তু তারা আইন মানতে রাজি না। নদী দূষণকারী কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
Source : Ittefaq