বিবিসি ॥ উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের সরকার বলছে তিব্বত থেকে নেমে আসা সিয়াং নদের জলের স্তর অস্বাভাবিক হারে নেমে গেছে গত কয়েকদিনে। এই সিয়াং নদ আসামে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম পেয়েছে। অরুণাচল সরকারের একজন মুখ্যপাত্র বলছেন তাদের সন্দেহ হয় চীন সরকার সিয়াং নদের জল প্রত্যাহার করছে অথবা নদটির উজানে কোথাও বড়সড় ধস নেমে গতিপথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বিষয়টি নিয়ে বেজিংয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশের সরকার বলছে, যে তিব্বত থেকে নেমে আশা সিয়াং নদের জলের স্তর হঠাৎ নেমে গেছে। জলের প্রবাহ এতটাই কমে গেছে যে, পাচিংহাট শহরের কাছে সেটি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
সিয়াং নদটি আরও নিচে ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়েছে। রাজ্যে সরকারের মূখপাত্র বিবিসিকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে মি. তাকো বলেন, হঠাৎ এই সিয়াং নদের জল কমে যেতে শুরু করে। তিনি আজ সকালে পাচিংহাট শহরে নদটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। অবস্থা এতটাই খারাপ যে নদ খাতটি পাড় থেকে প্রায় ১ কি.মি. সরে গিয়েছে। নদটি প্রায় শুকিয়ে গেছে। এখন যে কেউ সাঁতরিয়ে নদ পেরিয়ে যেতে পারবে। বলছিলেন অরুণাচল সরকারের মূখ্যপাত্র তাকো দাবি।
রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. দাবি বর্তমানে ঐ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টার। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি কারণে সিয়াং নদের এই জলপ্রবাহ কমে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে তাদের। মি. তাকো দাবির কথায় দুটি কারণ জলপ্রবাহ হঠাৎ নেমে যেতে পারে। প্রথমত চীন সরকার সিয়াং বা তার উপনদগুলো থেকে অত্যধিক জলপ্রত্যাহার করছে। বা সেগুলোর গতি মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত হিমালয়ের কোন দুর্গম জায়গায় ব্যাপক ধস নেমেও নদের গতিপথ আটকে গিয়ে থাকতে পারে। যদি কোথাও ধস নেমে থাকে তাহলে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা থাকছে। কারণ ঐ ধস যখন জলের চাপে সরে যেতে থাকবে তখন একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল পাহাড়ী পথে নেমে আসবে যা ডুবিয়ে দিতে পারে অরুণচলের ও ভাঁটি অঞ্চালের বির্স্তীর্ণ এলাকা। এর আগে ২০০০ সালে এ রকম ঘটনা একবার ঘটেছিল। যখন ঐতিহ্যম-িত পাচিংহাট শহরটি জলের তলায় চলে গিয়েছিল।
এর আগে কখনও সিয়াং নদের জলের স্তর এতটা নেমে যেতে দেখা যায়নি বলে নদের পাড়ের মানুষরা বলছেন। তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে কিভাবে সিয়াং নদের জলস্তর নেমে গেল সেটা জানতে বেজিংয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দিল্লীতে জানিয়েছেন দেশটির বিদেশমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা।
আজ দিল্লীতে চীন ও ভারতের বিদেশমন্ত্রীর পর্যায় পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের পরে এই মন্তব্য করেন মি. কৃষ্ণা। বিদেশ দফতরের কর্মকর্তা বলছেন যে, চীন আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদগুলোর উপরে তাঁরা যে সব প্রকল্প নিয়েছে তার কোনটাতেই জল প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। আর ভারতকে না জানিয়ে এমন কোন প্রকল্প তৈরি করবে না, যাতে ভাঁটি অঞ্চলে থাকা ভারতের সমস্যা হয়। চীনের দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় জল কমিশন নিয়মিত ঐ অঞ্চলের নদগুলোর ওপর নজর রাখে। নজরদারি চলে উপগ্রহের মাধ্যমে। এদিকে সিয়াং জলস্তর নেমে যাওয়ার খবর পেয়ে কেন্দ্রের জল কমিশন বিস্তারিত সমীক্ষা শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা নিয়ে গবেষণা করেন এমন কয়েকজন বিজ্ঞানীও বলছেন বিস্তারিত তথ্য যোগাড় করার আগে ভাঁটি অঞ্চলের রাজ্যে আসাম বা আরও নিচের দিকে বাংলাদেশে এর কতটা প্রভাব পড়বে বা আদৌ কোন প্রভাব পড়বে কিনা সেটা বলা কঠিন।
Source : dailyjanakantha