সাইফুর রহমান, বরিশাল | তারিখ: ০২-০৩-২০১২
বরিশাল সদর উপজেলায় রসুলপুর চর ও কীর্তনখোলা নদীর একটি অংশ ভরাট করে প্লট তৈরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধভাবে ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে এ কাজ করছেন।
|
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক খন্দকার মো. ফজলুল হক জানান, নদী ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এভাবে ভরাট হলে তা পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।
সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে চর জেগে ওঠে। এর নাম দেওয়া হয় রসুলপুর। এখানে ২৫ একর ২৩ শতাংশ খাসজমি আছে। এসব জমি চরবদনা জেএল ৬২ নম্বর মৌজার অধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে রসুলপুরের চরের জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে নিতে থাকেন। সম্প্রতি কয়েকজন ওই চরের পাশে কীর্তনখোলা নদী ভরাট এবং নতুন করে জেগে ওঠা চর দখল করে প্লট তৈরি করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভূমিদস্যুরা নানা কৌশলে নদী ভরাট করে প্লট তৈরি করছেন। প্রথম তাঁরা চাটাই ও বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে বাঁধের মতো নির্মাণ করেন। পরে ওই অংশ মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করে জমি তৈরি করে বিক্রি করে দেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীতে জেগে ওঠা প্রায় চার একর জমিতে পাঁচ ফুট উঁচু বাঁধ দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করছেন।
বাঁধ তৈরির কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক জানান, নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাঁদের ওই কাজে নিয়োগ করেছেন। মো. সেলিম নামের অন্য একজন শ্রমিক জানান, নুর ইসলাম এ জায়গায় নদী ভরাট করছেন। শ্রমিক মো. রুবেল জানান, বাঁধের কাজ শেষ হলে নদীর এ জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করা হবে। এরপর প্লট করে বিক্রি করা হবে।
জমির মালিক দাবিদার, নদী ভরাট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘আমি ও নুর ইসলাম এ বাঁধ দিচ্ছি। এখানের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। সেই অংশ ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিয়ে বাকি অংশ ভরাট করে প্লট বিক্রি করা হবে।’
খাসজমি কীভাবে বিক্রি করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কেনা সম্পত্তি। আমরা আদম আলী হাজির কাছ থেকে এ জমি কিনে নিয়েছি।’
ভূমিহীন কৃষক ফেডারেশন বরিশাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ১৯ জুলাই তারা স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে আবেদন করে। এ ছাড়া এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি।
ভূমিহীনদের পক্ষে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি মো. হারুন ভাণ্ডারি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সরকারের সময় ভূমিহীনদের পরিবর্তে রসুলপুর চরের খাসজমি নেতারা নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে নুর ইসলাম ও মো. ইউনুস মিয়া নদী ভরাট করে চর দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নুর ইসলাম বরিশাল নগরীর বটতলা এলাাকায় শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাসের পাশে নিজ বাড়িতে থাকেন। তিনি দাবি করে বলেন, ‘চরের যে অংশে আমরা ঘের দিয়েছি, তা ব্যক্তিমালিকানার জায়গা।’ নদীর মধ্যে আপনার জায়গা কীভাবে হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নদীর যে জমিতে পাইলিং করে মাটি দেওয়া হচ্ছে, ওই জমির খাজনা আমরা দিয়েছি। চরের মধ্যে যেখান পর্যন্ত ঘের দেওয়া হয়েছে, এর নিচে পানির মধ্যে আরও ১০-১২ হাত জায়গা আমাদের।’
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে ভূমি আইন অনুযায়ী খাল ও নদী ভরাট করার সুযোগ নেই। তবে প্রাকৃতিক চরের ক্ষেত্রে আগে ভূমি জরিপ ম্যাপ তৈরি করে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমিহীনদের কাছ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গত ১০ মাসে আমাদের কাছে রসুলপুর চরের জমির বিষয়ে এ ধরনের কোনো আবেদন দেওয়া হয়নি।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পলাশ কান্তি বালা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় কোনো চর বা সরকারি সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। ওই ভরাটের বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি।’
Source : Prothom Alo